সমাজসেবা রূপকল্প (Vision)
সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়ন।
সমাজসেবার অভিলক্ষ্য (Mission)
উপযুক্ত ও আয়ত্বাধীন সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে অংশীদারগণের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সুসংহত ও বিকাশমান সামাজিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জীবনমানের সমন্বিত সামাজিক উন্নয়ন সাধন।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সরকারের অন্যান্য জাতিগঠনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৫ সালে দেশে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম শুরু হলেও ১৯৬১ সালে সমাজসেবা পরিদফতরের সৃষ্টি হয়। ষাটের দশকের সৃষ্টিকৃত পরিদফতরটিই আজ সমাজসেবা অধিদফতরে উন্নীত হয়েছে।এ অধিদপ্তরের কার্যক্রম প্রথম দিকে ছিল শহরভিত্তিক এবং সেবামূলক। সময়ের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে এ অধিদপ্তরের কার্যক্রম দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর দেশের দুস্থ, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, দরিদ্র, এতিম, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী এবং সমাজের অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ও বহুমুখী কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর তৎকালীন প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় বস্তি সমস্যাসহ নানা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যা নিরসনে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে Urban Community Development Board, Dhaka-এর আওতায় ১৯৫৫ সালে শহর সমাজসেবা কার্যালয় এবং সমাজকল্যাণ পরিষদের আওতায় হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ১৯৪৩ সালের বঙ্গীয় ভবঘুরে আইন, ১৯৪৪ সালের এতিম ও বিধবা সদন আইনের আওতায় পরিচালিত ভবঘুরে কেন্দ্র (সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র), রাষ্ট্রীয় এতিমখানা (সরকারি শিশু পরিবার) পরিচালনার দায়িত্ব ১৯৬১ সালে গ্রহণ করে সৃষ্টি হয় সমাজকল্যাণ পরিদফতর। পরবর্তীতে সমাজসেবা কার্যক্রমের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও বিস্তৃত্তির কারণে ১৯৭৮ সালে সরকারের একটি স্থায়ী জাতিগঠণমূলক বিভাগ হিসেবে উন্নীত হয়ে ১৯৮৪ সালে সমাজসেবা অধিদফতর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে দেশব্যাপী শুধু ধ্বংসস্তুপ, বিরাজমান বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে যুদ্ধাহত, পঙ্গুত্ববরণকারীসহ আপামর জনতার কান্ডারিরূপে সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে আবারও অগ্রপথিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দারিদ্র্য বিমোচন ও শোষণমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়:
দারিদ্র্য বিমোচন ও শোষণমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে ১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ-শিশুদের পুনর্বাসনের নিমিত্ত বাংলাদেশ পরিত্যক্ত শিশু অধ্যাদেশ, ১৯৭২ জারি; বাংলাদেশে ‘SOS শিশু পল্লী’ স্থাপনে চুক্তি সম্পাদন, অনাথ শিশুদের জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় দত্তক প্রদান প্রকল্প গ্রহণ, বীরাঙ্গনা নারীদের পুনর্বাসনে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে অবস্থিত তৎকালীন সমাজকল্যাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নারী পুনর্বাসন বোর্ড স্থাপন, এতিম শিশু ও দুস্থ নারীদের জন্য প্রতিটি ১০০ আসনবিশিষ্ট ৫৬টি কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন সেন্টার (CPC) স্থাপন করেন যা বর্তমানে ‘সরকারি শিশু পরিবার’ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবন্ধী, হতভাগ্য ও অসহায় জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণকে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতায় আনয়নের জন্য তিনি দূরদর্শিতার নিদর্শনস্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করেন।
১৯৭৩ সালে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়, সমাজকল্যাণ বিভাগে গবেষণা ও মূল্যায়ন শাখা স্থাপন, কুটিরশিল্পের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য ঢাকার মিরপুর এবং রংপুরের শালবনে স্থাপন করা হয় আর্থ-সামাজিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন, ৪৭টি বিদ্যালয়ে সমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন, পল্লীপরিবার ও শিশু কল্যাণ কার্যক্রম চালুকরণ, পল্লীকেন্দ্রিক সমাজকল্যাণ কর্মসূচি, ভিক্ষুক পুনর্বাসনে আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ, শিশু অধিকার নিশ্চিতকরণার্থে পৃথক কিশোর আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ ও সমাজকল্যাণ পরিদপ্তরকে সমাজকল্যাণ বিভাগে রূপান্তর করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ হিসাবে পল্লী সমাজসেবা (RSS) কার্যক্রমের শুভসূচনা করেন।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ পরিত্যক্ত শিশু (বিশেষ বিধান) ১৯৭৫, বিধিমালা প্রণীত হয়। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নারীবান্ধব পল্লী মাতৃকেন্দ্র (RMC) স্থাপন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু করে শাহাদাতবরণের পূর্ব পর্যন্ত ৩ বছর ৭ মাস ৫ দিন সময় পেলেও সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবদ্দশায় ৫৩টি উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হয়।
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অব্যাহত অগ্রযাত্রা শুরু:
কাল পরিক্রমায় ১৯৯৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক জাতির পিতার রেখে যাওয়া সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও বলিষ্ঠ স্বকীয় নেতৃত্বের দ্বারা দুস্থ, দরিদ্র, অবহেলিত, অনগ্রসর, সুবিধাবঞ্চিত পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই নিরাপত্তা বেষ্টনী তথা সামাজিক নিরাপত্তামূলক জুতসই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুরু হয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অব্যাহত অগ্রযাত্রা। উপর্যুক্ত ‘পল্লী সমাজসেবা’ ও ‘পল্লী মাতৃকেন্দ্র’সহ বর্তমানে ‘শহর সমাজসেবা কার্যক্রম’ এবং ‘দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম’সহ মোট ৪টি দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম চলমান। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলা করার নিমিত্ত ৮০টি শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে কাক্সিক্ষত মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনক্রমে ‘দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে।
মানুষ সামাজিক জীব। মানব জীবনচক্র পরিক্রমায় প্রথমেই আসে শৈশব। তাই জীবনচক্রের ক্রমানুসারে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলো প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক নিরাপত্তা, কার্যক্রম ও পরিকল্পনা বিষয়ক।
প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম:
সমাজসেবা অধিদপ্তর শিশুদের বিকাশ, সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ২১২টি প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ৬টি ছোটমণি নিবাসে পরিত্যক্ত, ঠিকানাহীন, দাবিদারহীন ও পাচারকারীদের নিকট থেকে উদ্ধারকৃত এবং ০-৭ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের এবং ৮৫টি শিশু পরিবার ও ৩টি দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে দরিদ্র, অসহায়, ছিন্নমূল ও দুস্থ’ শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, ভরণপোষণ শিশুদের সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ, চিত্তবিনোদন নিশ্চিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ৬টি কেন্দ্রের মাধ্যমে এতিম ও প্রতিবন্ধীদের যুগোপযোগী কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। ৫টি প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিশু পরিবারের শিশুদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ৪টি সরকারি বাক্-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও ৬৪টি জেলায় সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের ভরণপোষণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বাক্-শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবকদেরকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে টঙ্গীতে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার রউফাবাদে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশুদের উন্নয়নের জন্য ৩টি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে যার একটি মেয়েদের জন্য। একইভাবে মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের কারাগারের বাইরে নিরাপদে রাখার জন্য ৬টি মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া অনৈতিক ও অসামাজিক পেশায় জড়িত মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৬টি ‘সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’ রয়েছে। এছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় একটি আদর্শমানের শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ ১৩টি জেলায় রয়েছে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। ‘জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রে’ ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন (BSED) ডিগ্রিসহ মাস্টার্স অব স্পেশাল এডুকেশন (MSED) ডিগ্রি অর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের এতিম ও অনাথ শিশুদের কল্যাণে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত এতিমখানার মধ্যে মাথাপিছু মাসিক ২,০০০ টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও ইউনিসেফ-এর সহায়তায় ‘চাইল্ড হেল্প লাইন-১০৯৮’ সেবা প্রদান করে আসছে।
ডিজিটাল সেবাগ্রহণে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও:
বঙ্গবন্ধু এমন সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে সকল নাগরিক পাবে সমান অধিকার। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি, যা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বিপ্লবে অংশগ্রহণের পথ দেখায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% মানুষ প্রতিবন্ধী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-এর মতে বাংলাদেশে প্রায় ৯ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার, যার বিশাল একটি অংশই শিক্ষার্থী। শিক্ষাক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণে মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সকল পাঠ্যপুস্তককে ফুল টেক্সট ও ফুল অডিও মাল্টিমিডিয়া টকিং বইতে প্রণয়ন করা হয়, যা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। শিক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অংশীজনদের সহযোগিতায় সেবাপ্রাপ্তির পথও অনেক সুগম হয়েছে। ডিজিটাল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সমাজসেবা অধিদপ্তর তৃতীয় জাতীয় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০১৯ -এ শ্রেষ্ঠ সরকারি দপ্তর হিসেবে পুরস্কার লাভ করে।
সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম:
দেশে প্রথম বয়স্ক ভাতা যুগান্তকারী পদক্ষেপ গৃহীত হয় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ‘বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচির মাধ্যমে। দেশের ৫৮.০১ লক্ষ বয়স্ক উপকারভোগীর ভাতা G2P পদ্ধতিতে ভোগান্তি ছাড়াই অল্প সময়ে তাদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা দুস্থ নারীদের দুর্দশা লাঘবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা প্রবর্তন করেন ১৯৯৮ সালে। এছাড়া সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচি গ্রহণ করে। সমাজের পিছিয়ে পড়া সকল জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে কাজ করে। সে অনুযায়ী হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে ভাতা, উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদ্রোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারকে চিকিৎসা ব্যয় বহনে আর্থিক সহায়তা করা এবং রোগীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে সুস্থ সমাজগঠনসহ সামাজিক সূচকে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে চলছে। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৬০ হাজার চা শ্রমিককে জনপ্রতি ৫০০০ টাকা হারে G2P মাধ্যমে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৫টি আবাসন প্রদান করা হয়েছে। সরকার ভিক্ষাবৃত্তির মতো অমর্যাদাকর পেশা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ নামে কর্মসূচি গ্রহণ করে। এজন্য বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্রেসমূহের মধ্যে ৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬টি টিন শেড ভবন নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৮টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। য়েছে। অবশিষ্ট ৮টির নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি:
হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের ‘রোগী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে গরিব, অসহায় ও দুস্থ রোগীদের ঔষধ, রক্ত, খাদ্য, বস্ত্র, চশমা, হুইল চেয়ার ও সহায়ক সামগ্রীর মাধ্যমে রোগীদের আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক ৬৪টি জেলা এবং মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৬টিসহ ৭০টি ইউনিটে প্রবেশন অ্যান্ড আফটার কেয়ার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ৬৪ জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে এ পর্যন্ত ৭০০৯৯টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিবন্ধিত হয়ে সমাজসেবার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ অবদান রাখছে। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ ও সুরক্ষায় জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ প্রণয়ন, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩ প্রণয়ন, ২০১৪ সালের প্রবীণ ব্যক্তিদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হিসেবে ঘোষণা, প্রতিটি শিশু পরিবারে প্রবীণদের জন্য ১০টি স্বতন্ত্র আসন নির্ধারিত রয়েছে, ৮ বিভাগে প্রবীণদের জন্য ৮টি শান্তিনিবাস স্থাপনের নির্মাণকাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
পরিকল্পনা বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ:
সমাজসেবা অধিদপ্তর উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে তাদের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৯টি প্রকল্প ও ১টি কর্মসূচি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ৬৪ জেলায় জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ম পর্যায়ে ২২টির মধ্যে ২১টি জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ক্যাশ ট্রান্সফার মডার্নাইজেশন (সিটিএম) প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬৫০ জন সমাজকর্মীকে আধুনিক ট্যাব এবং কার্যালয়ে ৫৭০টি মোটর সাইকেল প্রদান করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক পেশাজীবীদেরকে ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অটুট রাখতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের জনবলের পেশাগত দক্ষতা ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় সমাজসেবা একাডেমিতে কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন হচ্ছে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ৬টি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
মানবকল্যাণ পদক:
ডিজিটাল সেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অভিগম্যতা নিশ্চিত করনার্থে সমাজসেবার গৃহিত কার্যক্রম সমুহ দুর্বার গতিতে চলমান রয়েছে। মানবকল্যাণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি ও সংগঠনকে উৎসাহ প্রদানের নিমিত্ত ২০২০ সালে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালেই প্রথম সমাজহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে ২০২০ এবং ২০২১ সালে গৌরবোজ্জল ভূমিকা রাখার জন্য মানবকল্যাণ পদক প্রদান করা হয়েছে।