চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি
চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের চা উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় ৯৬.০৭ মিলিয়ন কেজি এবং এখান থেকে চা রপ্তানি করা হয় ২৫টি দেশে। এই চা উৎপাদনের যারা সরাসরি জড়িত তারাই চা-শ্রমিক। কিন্তু চা-শ্রমিকরা সকল নাগরিক সুবিধা ভোগের অধিকার সমভাবে প্রাপ্য হলেও তারা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার বলে প্রতিয়মান। তাদের প্রতি সদয় আচরণ ও তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সকলের দায়িত্ব। অবহেলিত ও অনগ্রসর এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, তাদের সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণ, পারিবারিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ‘চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম’ গ্রহণ করেছে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ক) আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান;
খ) আপদকালীন সময়ে চা-শ্রমিকদের অর্থ সহায়তা প্রদান;
গ) পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি।
কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল:
প্রকৃত দুঃস্থ চা-শ্রমিকদের সনাক্ত করে সমাজসেবা অধিদফতরের জনবল, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এ নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকৃত দুঃস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।
কার্যএলাকা:
সিলেট, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের সংশ্লিষ্ট জেলাসমুহে, চা বাগানে কর্মরত চা শ্রমিকগণ এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন।
অর্থসহায়তার পরিমাণ:
প্রকৃত দুঃস্থ ও গরীব চা-শ্রমিককে নির্বাচন করে প্রতি চা-শ্রমিক পরিবারকে ৫,০০০ (পাঁচ হাজার ) টাকা করে বছরে এককালীন অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে। তবে সময়ে সময়ে সরকারি নিদেশনা মোতাবেক এই সহায়তা কম/বেশী হতে পারে।
প্রার্থী নির্বাচনের মানদন্ড:
(ক) নাগরিকত্ব: প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
(খ) দুঃস্থ: সর্বোচ্চ দুঃস্থ ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
(গ) লিঙ্গ: নারী শ্রমিককে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
(ঘ) আর্থ-সামাজিক অবস্থা:
১. আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে: নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রধিকার দিতে হবে।
২.সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে: চা-শ্রমিকদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
(ঙ) ভূমির মালিকানা: প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমিহীন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বসতবাড়ী ব্যতিত কোন ব্যক্তির জমির পরিমাণ ০.৫০ একর বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হবেন।
অর্থ সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্যতা ও শর্তাবলী:
১. সংশ্লিষ্ট চা বাগানে কর্মরত চা-শ্রমিক হতে হবে;
২. জন্ম নিবন্ধন/জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকতে হবে;
৩. চা বাগান নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত পরিচয়পত্র থাকতে হবে;
৪. সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স হতে হবে;
৫. প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয়: অনূর্ধ্ব ৪৮,০০০ (আট চল্লিশহাজার) টাকা হতে হবে;
৬. বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া:
১. সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন/পৌর সমাজকর্মী চা বাগান কর্তৃপক্ষের সহায়তায় অর্থ সহায়তা প্রাপ্তির জন্য আবেদনের ভিত্তিতে চা-শ্রমিকদের প্রাথমিক তালিকা (তালিকা-১) প্রস্তুত করে উপজেলা কমিটিতে পেশ করেন।
২. উক্ত তালিকা-১ এবং প্রাপ্ত আবেদনসমূহ উপজেলা কমিটি আবেদনপত্রসমূহ যাচাই বাছাই করে নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত চা-শ্রমিকদের তালিকা (তালিকা-২) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটিতে প্রেরণ করে। জেলা কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যের সম্মতিক্রমে উপজেলা/শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা অর্থ সহায়তা বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
বছরওয়ারী বরাদ্দ (২০১৩-১৪ অর্থবছর হতে ২০২৩-২৪)
অর্থবছর |
বরাদ্দ |
উপকারভোগী |
২০১৩-১৪ |
১ কোটি |
২০০০ জন |
২০১৪-১৫ |
৫ কোটি |
১০০০০ জন |
২০১৫-১৬ |
১০ কোটি |
২০০০০ জন |
২০১৬-১৭ |
১৫ কোটি |
৩০০০০ জন |
২০১৭-১৮ |
১৫ কোটি |
৩০০০০ জন |
২০১৮-১৯ |
২০ কোটি |
৪০০০০ জন |
২০১৯-২০ |
২৫ কোটি |
৪৯৯০০ জন |
২০২০-২১ |
২৫ কোটি |
৫০০০০ জন |
২০২১-২২ |
২৫ কোটি |
৫০০০০ জন |
২০২২-২৩ |
৩০ কোটি |
৬০০০০ জন |
২০২৩-২৪ |
৩০ কোটি ২১ লক্ষ |
৬০০০০ জন |
২০২৪- ২৫ | ৩৬ কোটি ২৬ লক্ষ | ৬০০০০ জন |
কর্মসূচির নামঃ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি
ভুমিকাঃ অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপমতে বাংলাদেশে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী প্রায় ১৪,৯০,০০০ জন। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন তথা এ জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি দুটি একত্রে ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ কর্মসূচি পৃথক হয়ে "অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি "নামে স্বতন্ত্র কর্মসূচি হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
অনগ্রসর সম্প্রদায়ের সংজ্ঞা
অনগ্রসর সম্প্রদায় বা শ্রেণী যারা সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। চরম অবহেলিত, বিছিন্ন, উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী হিসেবে এরা পরিচিত। অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে জেলে, সন্যাসী, ঋষি, বেহারা, নাপিত, ধোপা, হাজাম, নিকারী, পাটনী, কাওড়া, তেলী, পাটিকর, সুইপার, মেথর বা ধাঙ্গর, ডোমার, ডোম, রাউত, ও নিম্নশ্রেণীর পেশার জনগোষ্ঠী।
কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত পটভূমি:
এস ডি জি এর মূল মন্ত্র “কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবেনা” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে অনগসর সম্প্রদায়কে মূলস্ত্রোতে আনয়নের জন্য ২০১২-২০১৩ অর্থ বছর হতে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে দেশের ৭টি জেলাকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে নতুন ১৪ জেলাসহ মোট ২১টি জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয় এবং জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, নীলফামারী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং হবিগঞ্জ। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে পূর্বের ২১ জেলা সহ নতুন ৪৩টি জেলায় কর্মসূচি সম্প্রসারণ করে মোট ৬৪ জেলায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ কর্মসূচিটি পৃথক হয়ে বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি নামকরণ হয়। 2021-22 অর্থবছর হতে এ কর্মসূচির বিশেষ ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রমের নগদ সহায়তায় জিটুপি পদ্ধতিতে প্রদান করা হচ্ছে।
লক্ষ ও উদ্দেশ্য : অসগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নরূপ :
উপকারভোগীর পরিসংখ্যান
অর্থবছর |
বরাদ্দ |
বিশেষ বয়স্ক ভাতাভোগী |
শিক্ষা উপবৃত্তিভোগী |
প্রশিক্ষণ |
প্রশিক্ষণ উত্তর সহায়তা |
২০১২-১৩ |
৬৬,০০,০০০/- |
২১০০ |
৮৭৫ |
চালু হয় নি |
চালু হয় নি |
২০১৩-১৪ |
৭,৯৬,৯৮,০০০/- |
১০৫০০ |
২৮৭৭ |
১০৫০ |
চালু হয় নি |
২০১৪-১৫ |
৯,২২,৯৪,০০০/- |
১০৫৩৯ |
২৮৭৭ |
১০০০ |
২১০ জন |
২০১৫-১৬ |
১৮,০০,০০,০০০/- |
১৯১৩৯ |
৮৫২৬ |
১২৫০ |
১২৫০ জন |
২০১৬-১৭ |
২০,৩০,০০,০০০/- |
১৯৩০০ |
৮৫৮৫ |
১২৫০ |
১২৫০ জন |
২০১৭-১৮ |
২৭,০০,০০,০০০/- |
২৩২০০ |
১০৭৩২ |
২০০০ |
২০০০ জন |
২০১৮-১৯ |
৫০,০৩,০০,০০০/- |
৪০০০০ |
১৯০০০ |
২0০০ |
২0০০ জন |
২০১৯-২০ |
57,87,00,000/- |
৪৫০০০ |
২১৯০০ |
২০০০ |
২০০০ জন |
২০২০-২১ |
57,87,00,000/- |
৪৫২৫০ |
২১৯০৩ |
২০০০ |
২০০০ জন |
২০২১-২২ |
57,87,00,000/- |
৪৫২৫০ |
২১৯০৩ |
২০০০ |
২০০০ জন |
২০২২-২৩ |
57,87,00,000/- |
৪৫২৫০ |
২১৯০৩ |
১৬০০ |
১৬০০ জন |
২০২৩-২৪ |
৬৮,৮৯,০০,০০০/- |
৫৪৩০০ |
২৬২৮৩ |
১৯২০ |
১৯২০জন |
সেবা প্রাপ্তির স্থান/অফিসের নাম:
উপজেলা/শহর সমাজসেবা অফিস
দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা / কর্মচারী:
উপজেলা / শহর সমাজসেবা অফিসার
সেবা প্রদান পদ্ধতি (সংক্ষেপে):
বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে উপজেলা/শহর সমাজসেবা অফিসার বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন অত:পর নির্ধারিত ফরমে আগ্রহী ব্যক্তিদের সমাজসেবা অফিসার বরাবর আবেদন করতে হয় । প্রাপ্ত আবেদন ইউনিয়ন কমিটি কর্তৃক সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে প্রস্তাব আকারে উপজেলা কমিটিতে প্রেরণ করে। অত:পর উপজেলা কমিটি যাচাই বাছাই করে বরাদ্দ অনুসারে উপকারভোগী নির্বাচন করে। নির্বাচিত ব্যক্তির নামে এমআইএসে ডাটা এন্ট্রি, ব্যাংক হিসাব খোলা, যাচাইকরণ এবং মাঠপর্যায়ের অফিস হতে পেরোল প্রেরণ করা হয়। প্রেরিত পেরোল অনুমোদনসাপেক্ষে আইবাস++ এর মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে উপকারভোগীর মোবাইল/ব্যাংক হিসাবে ভাতার অর্থ প্রেরিত হয়। এছাড়াও জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ১৮ বছর বয়সের উর্ধ্ব কর্মক্ষম ব্যক্তিদেরকে ট্রেড ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় । প্রশিক্ষণার্থীদেরকে প্রশিক্ষণোত্তর অফেরতযোগ্য ১০,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
সেবা প্রাপ্তির প্রয়োজনীয় সময়:
১. নতুন বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আবেদনের ০৩ মাসের মধ্যে প্রতিবছর জুলাই থেকে ভাতা প্রদান শুরু হয়।
২. পুরাতন বা নিয়মিতদের ক্ষেত্রে ০৭ কর্মদিবস
প্রয়োজনীয় ফি/ট্যাক্স/আনুষঙ্গিক খরচ: বিনামূল্যে
বিনামূল্যে
সংশ্লিষ্ট আইন/বিধি/ নীতিমালা:
বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি নীতিমালা ২০১৩
নির্দিষ্ট সেবা পেতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রতিকারকারী কর্মকর্তা :
১. চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ (সংশ্লিষ্ট উপজেলা)
২. জেলা প্রশাসক (সংশ্লিষ্ট জেলা) বা সিটিকরপেরেশন / পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা / আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (সংশ্লিষ্ট প্রশাসন)
৩. কর্মসূচি পরিচালক