Wellcome to National Portal
সমাজসেবা অধিদফতর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১০ জুলাই ২০২৩

দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম

কার্যক্রমের পটভূমি:

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি স্বল্প আয়তন ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এ দেশের ভৌগলিক আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এবং বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৬২ লক্ষ। এ দেশের মানুষের মাথাপিছু গড়   আয় ১১৯০ মার্কিন ডলার। খাদ্যাভাব, পুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণজনিত রোগ-ব্যাধি, আর্সেনিক বিষক্রিয়া, আয়োডিনের অভাবজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব, প্রতিনিয়ত যানবাহন দুর্ঘটনা, খরা-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস-ঘুর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও  দেশের মানুষের নিত্য-নৈমিত্তিক দুর্ভোগের কারণ। এছাড়া সহিংস এসিড নিক্ষেপ, আগুন, বোমাবাজি ও অন্যান্য রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের অসতর্ক ব্যবহার অথবা অপব্যবহারের কারণে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ দগ্ধ হয়ে সুচিকিৎসার অভাব অথবা অপচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছে না হয় পঙ্গুত্ব বরণ করে প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। এ সকল দগ্ধজনিত ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কর্মসংস্থান ও সুযোগের অভাবে পরিবারের গলগ্রহ হয়ে-ক্ষুধা, অবহেলা ও অযত্নে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

প্রতিবন্ধিতা কোন অভিশাপ বা কোন দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণ যা-ই হউক না কেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত পরিচর্যার ব্যবস্থা করা গেলে অধিকাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের বিষয়টি নিজের ইচ্ছাকৃত বা কোন কর্মফল নয় বরং জন্মগত বা কোন না কোন দুর্ঘটনার ফল। তাই এরূপ দুর্ঘটনা প্রত্যেকের জীবনেই সংঘটিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য এসিড নিক্ষেপ, আগুনে দগ্ধ বা অন্যান্য দুর্ঘটনার কারণগুলো কোন পরিকল্পিত সহিংস ঘটনা বা দুর্ঘটনা যা-ই হোক না কেন এ সমস্যা সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব না হলেও সচেতনতা সৃষ্টি ও সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে এরূপ দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া গেলে যে কোন দগ্ধজনিত বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চিকিৎসার দ্বারা সুস্থ করে তোলা যায়। প্রশিক্ষণের দ্বারা প্রতিবন্ধীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে উপার্জনক্ষম ও আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন, আত্ম-নির্ভরশীল, স্বাবলম্বী এবং সামাজিকভাবে পুনর্বাসনে সহায়তা করা সম্ভব।

 

দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

  • দগ্ধ ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ।
  • কার্যক্রম এলাকায় জরিপের মাধ্যমে দগ্ধ ব্যক্তিদের সংখ্যা নিরূপণ করা।
  • প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের লক্ষে দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার তালিকা (Priority list) প্রণয়ন করা।
  • দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে দক্ষতা ভিত্তিক ও উপার্জনমূখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এ বিষয়ে প্রয়োজনে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ।
  • দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা ভিত্তিক পেশা অথবা ব্যক্তি যে কাজে অভিজ্ঞ ও পারদর্শী এরূপ যে কোন কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের জন্য সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারকে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা প্রদান।
  • প্রচার মাধ্যমে দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণ ও পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা, দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সতর্ক স্থানান্তর ও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য দক্ষ স্বেচ্ছাসেবী দল গঠনে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করা। প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষেত্রে অনুদান প্রদান/ সহায়ক উপকরণ সরবরাহ করা।

সর্বোপরি দগ্ধ হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে জনগণকে সচেতন ও সতর্ক করা, এসিড নিক্ষেপ বা অন্যান্য কারণে দগ্ধজনিত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহিত করা এবং দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে কর্মসংস্থানমূলক কাজে আর্থিক ঋণ সহায়তা দিয়ে এ সকল অসহায় লোকদের উন্নয়ন স্রোতধারার সাথে সম্পৃক্ত করে জাতীয় উন্নয়নে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

সেবা:

এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমাজসেবা অফিসারগণ দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ভিকটিমের চিকিৎসা বিষয়ে পরামর্শ, রোগীকে সাহস যোগান ও সুস্থ হওয়ার আশ্বাস দিয়ে মানসিক ভারসাম্য রক্ষা ও দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সমাজসেবা অফিসার ও ইউনিয়ন সমাজকর্মী/ পৌর সমাজকরমীগণ দগ্ধ ব্যক্তিকে জরুরী ভিত্তিতে স্থানীয় কোন হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবেন।

ক্ষুদ্রঋণ: দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যাদের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ১,০০,০০০ টাকার উর্দ্ধে নয়, তাদেরকে ৫০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ দেয়া হয়ে থাকে। ঋণ গ্রহণের ২ মাস পর ৫% সার্ভিস চার্জসহ সমান ২০ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়।

চিকিৎসা সহায়তা: দগ্ধ দরিদ্র ব্যক্তিকে এককালীন চিকিৎসা সহায়তা বাবদ সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।

বাস্তবায়নাধীন এলাকা:

সমগ্র বাংলাদেশের সকল উপজেলা (৪৯৫টি), সকল শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের (৮০টি) ও তেজগাঁও সার্কেল এর মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মোট ৫৭৬টি কার্যালয়।

সেবা গ্রহীতা:

নিম্ন আয়ের দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যাদের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ১,০০,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।

 

দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন অগ্রগতি

  • কার্যক্রম প্রথম শুরু: ২০০২-২০০৩ খ্রিস্টাব্দ
  • আওতাভুক্ত ইউনিট সংখ্যা: ৫৭৬ টি
  • সর্বমোট প্রাপ্ত বরাদ্দের পরিমাণ: ১০৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ০৬ হাজার ২৫০ টাকা
  • ক্ষুদ্রঋণ হিসাবে সর্বমোট বরাদ্দের পরিমাণ: ৯৫ কোটি ৯৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৭০ টাকা  
  • মূল অর্থ আদায়ের পরিমাণ: ৮২ কোটি ৫২ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৮০ টাকা
  • মূল অর্থ আদায়ের হার: ৮৬%
  • ক্রমপুঞ্জিত পুনঃবিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ: ১৩৫ কোটি ২৭ লক্ষ ১৩ হাজার ৭৬৬ টাকা                 
  • ক্রমপুঞ্জিত পুনঃবিনিয়োগের অর্থ আদায়ের হার: ৮৫%
  • আদায়কৃত মোট সার্ভিস চার্জের পরিমাণ: ৮ কোটি ৭৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৫০ টাকা
  • প্রাপ্ত ব্যাংক সুদের পরিমাণ: ৪ কোটি ৬৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ২১৮ টাকা 
  • উপকারভোগীদের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের পরিমাণ: ২ কোটি ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৯৫ টাকা
  • শুরু হতে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা: ১ লক্ষ ৯১ হাজার ১৩০ টি পরিবার
  • বর্তমান ঋণগ্রহীতার সংখ্যা: ১ লক্ষ ৮৬৫ জন।

 

কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া:

মাঠপর্যায়ে পরিবার জরিপের মাধ্যমে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসরত (যে পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকার উর্ধে নয়) দগ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিত করা হয়। অতঃপর নির্ধারিত স্কীমের বিপরীতে জন প্রতি  ৫,০০০/- টাকা হতে ৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়। ঋণ প্রদানের ২ মাস পর হতে ৫% সার্ভিস চার্জসহ সমান ২০ কিস্তিতে ঋণের টাকা আদায় করা হয়। কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতীয় পর্যায়ে ১৯ সদস্যের ‘জাতীয় পরিচালনা (স্টিয়ারিং) কমিটি’, জেলা পর্যায়ে ১৩ সদস্যের ‘জেলা পরিচালনা (স্টিয়ারিং) কমিটি’ উপজেলা পর্যায়ে ১১ সদস্যের ‘উপজেলা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কমিটি’ এবং শহর ও মহানগর এলাকার জন্য শহর সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য গঠিত ‘ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে।

সেবাদান কেন্দ্র:

৪৯৫টি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়;

৮০টি শহর সমাজসেবা কার্যালয় ও তেজগাঁও সার্কেল অফিস;

বার্ণ ইউনিট আছে এমন ২১ টি হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়।

 

 

কার্যাবলি:

  • দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী জরিপ;
  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তালিকাভূক্তি
  • বৃত্তিমূলক/সামাজিক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন
  • স্কীমসহ নির্ধারিত ফর্মে আবেদন
  • স্কীম এর সম্ভাব্যতা যাচাই
  • উপযুক্ত ঋণ গ্রহীতা নির্বাচন;
  • সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান;

 

নাগরিকদের সহযোগিতার ক্ষেত্র:

  • সুবিধাভোগী কর্তৃক ঋণ প্রাপ্তির পর তৃতীয় মাস হতে সমান ২০ কিস্তিতে অথবা স্কীম ভেদে ১, ২ বা ৩ কিস্তিতে ঋণের অর্থ শতকরা ৫ ভাগ সার্ভিসচার্জসহ ফেরত দেয়া;
  • ঋণগৃহীতা কর্তৃক নিয়মিত নির্ধারিত হারে সঞ্চয় করা;
  • কার্যক্রমের মাধ্যমে সদস্যদের যে সকল বিষয়ে সচেতন করা হয় তা মেনে চলা;
  • কোন সুবিধাভোগী প্রাপ্ত ঋণের অর্থ নিয়মমত পরিশোধ না করলে তা আদায়ে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা;
  • ঋণ প্রদানে কোন অসচ্ছতা পরিলক্ষিত হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত করা।

সেবা প্রদানের সময়সীমা:

কার্যক্রম বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক উপযুক্ত ঋণ গ্রহীতা নির্বাচনের পর সর্বোচ্চ ১৫ কর্ম দিবস।

 

সেবা পাওয়ার জন্য যার সাথে যোগাযোগ করতে হবে:

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, সকল উপজেলা;

সমাজসেবা অফিসার, সকল শহর সমাজসেবা কার্যালয়;

সমাজসেবা অফিসার, হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয় (বার্ণ ইউনিট আছে এমন হাসপাতালসমূহ)।